লালমনিরহাটের কালীগঞ্জ উপজেলার বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের শিক্ষার্থীদের নিয়ে ফেসবুকে ১৮ জুলাই প্রতিবন্ধী প্রজন্ম বলে পোস্ট দেওয়া উত্তর বাংলা কলেজের সেই অধ্যক্ষ আবদুর রউফ সরকারকে অবিলম্বে অপসারণের দাবিতে ফুঁসে ওঠে কলেজের শিক্ষার্থীরা।
এ দাবি আদায়ের জন্য রোববার (২৭ অক্টোবর) দুপুর ১২টা থেকে বিকাল ৩টা পর্যন্ত আন্দোলনরত কলেজ শিক্ষার্থীরা বড়বাড়ী-লালমনিরহাট-বুড়িমারী জাতীয় মহাসড়কের কাকিনা পয়েন্টের শহীদ মানিক চত্ত্বরে অবস্থান নিয়ে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ করেছেন।
এর আগে আন্দোলনরত কাকিনা উত্তর বাংলা কলেজের কয়েকশত শিক্ষার্থী কলেজ ক্যাম্পাস থেকে একই দাবিতে অনির্দিষ্টকালের জন্যে ক্লাস বর্জনের ঘোষণা দিয়ে বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে শহীদ মানিক চত্ত্বরে এসে মিলিত হন।
সর্বস্তরের ছাত্র সমাজ কাকিনার ব্যানারে আয়োজিত এ মানববন্ধন ও বিক্ষোভ সমাবেশ থেকে উত্তর বাংলা কলেজের বিতর্কিত ও সমালোচিত অধ্যক্ষ আবদুর রউফ সরকারকে অবিলম্বে কলেজ অধ্যক্ষের পদ থেকে অপসারণ এবং কলেজের প্রতিষ্ঠাতা স্কটল্যান্ড প্রবাসী বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ, লেখক, অধ্যাপক ড. মোজাম্মেল হককে নিয়ে ফেসবুকে কটুক্তি করার জন্য কলেজের ইংরেজি বিভাগের প্রভাষক এস. তাবাসসুম রায়হান মুসতাযীরকে কলেজে অবাঞ্চিত ঘোষণা করা হয়।
এ সময় কলেজের সাবেক শিক্ষার্থীরা তাদের বক্তব্যে বলেন, বৃহত্তর রংপুর বিভাগের মধ্যে ধারাবাহিক সাফল্যের বাতিঘর উত্তর বাংলা কলেজের ভাবমূর্তি উদ্ধার করতে তাদের এ আন্দোলন। বিতর্কিত ও সমালোচিত বর্তমান কলেজ অধ্যক্ষ আবদুর রউফ সরকার ও সাময়িক বরখাস্ত হওয়া ইংরেজি বিভাগের প্রভাষক এস. তাবাসসুম রায়হান মুসতাযীরের কারণে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটির সার্বিক ভাবমূর্তি নষ্ট হওয়ার উপক্রম হয়েছে।
এ সময় বক্তাগণ তাদের বক্তব্যে উল্লেখ করেন, কলেজ অধ্যক্ষ আবদুর রউফ সরকারকে বিদায়ী আওয়ামী ফ্যাসিষ্ট সরকারের দোসর এবং সহযোগী হিসেবে চিহ্নিত করে অবিলম্বে কলেজ অধ্যক্ষের পদ থেকে তার অপসারণ দাবি করেন। আর প্রভাষক এস. তাবাসসুম রায়হান মুসতাযীর কলেজ প্রতিষ্ঠাতাকে ড. মোজাম্মেল হককে নিয়ে অশোভন মন্তব্য করায় তাঁকে অবাঞ্চিত ঘোষণা করে তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করার দাবি জানান।
উল্লেখ্য যে, অধ্যক্ষ আবদুর রউফ সরকার বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় চলতি বছরের ১৮ জুলাই ফেসবুকে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের প্রতিবন্ধী প্রজন্ম অ্যাখ্যা দিয়ে পোস্ট দেন। এ ঘটনাসহ অন্যায় ভাবে ও বিধি লঙ্ঘন করে তাকে চাকরি থেকে সাময়িক বরখাস্ত করা, হয়রানি মূলক ভাবে সাইবার ট্রাইবুনালে মামলা দায়ের করাসহ বিভিন্ন অভিযোগে কলেজ অধ্যক্ষ আবদুর রউফ সরকারের বিরুদ্ধে আইনগত পদক্ষেপ নেওয়ার দাবিতে লালমনিরহাট জেলা প্রশাসক বরাবর গত ২০ অক্টোবর লিখিত অভিযোগ করেন। একই দিন একই দাবিতে দুপুর সাড়ে ১২টা থেকে বিকাল সাড়ে ৫টা পর্যন্ত অনশন কর্মসূচি পালন করেন। লালমনিরহাট জেলা প্রশাসন অধ্যক্ষ আবদুর রউফ সরকারের ফেসবুকে দেওয়া আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের প্রতিবন্ধী প্রজন্ম বলে পোস্টকে সাম্প্রতিক সময়ে সংঘটিত ছাত্র জনতার বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনের মূলনীতির সঙ্গে সাংঘর্ষিক উল্লেখ করে তার বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করতে কালীগঞ্জ উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসারকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। গত শুক্রবার বিকালে উত্তর বাংলা কলেজ অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে কালীগঞ্জ থানায় লিখিত অভিযোগ করেন উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার। কালীগঞ্জ থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করে থানা থেকে অভিযোগটি রংপুর সাইবার ট্রাইবুনালে প্রেরণ করা হয়েছে পরবর্তী আইনগত পদক্ষেপ নিতে।
কাকিনা উত্তর বাংলা কলেজের ভাইস প্রিন্সিপাল মাহফুজুল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেন, শিক্ষার্থীরা দুটি ক্লাস করেছে। ব্যানারে কি লিখে আন্দোলন করছে, সেটি তিনি জানেন না। তিনি এক প্রশ্নের জবাবে বলেন, কলেজ অধ্যক্ষ কলেজে উপস্থিত ছিলেন না।
ইংরেজি বিভাগের প্রভাষক এস. তাবাসসুম রায়হান মুসতাযীর সাংবাদিকদের বলেন, আমি বর্তমান অধ্যক্ষের অনৈতিক প্রস্তাবের পর সংবাদ সম্মেলন করেছি, এর আগে লালমনিরহাট জেলা প্রশাসক বরাবর লিখিত অভিযোগ করেছি। এ অবস্থায় ২০২৩ সালের ১৬ মার্চ থেকে কলেজে যাই না। তিনি এক প্রশ্নের জবাবে বলেন, আমার আন্দোলনের কারণে অধ্যক্ষ আবদুর রউফ সরকারকে কলেজ থেকে বিদায় নিতে হচ্ছে। এমন ধারণায় সাবেক গভর্নিং বডির দুয়েকজন সদস্য কোমলমতি শিক্ষার্থীদের ভুল বুঝিয়ে আমার পিছনে লাগিয়ে দিয়েছে। তিনি বলেন, আমি কলেজে সংঘটিত বিভিন্ন সময়ের অনিয়ম ও দূর্নীতির তথ্য প্রকাশ করে দিয়েছি, আরও দিতে পারি, দূর্নীতিবাজদের সে তিনি যেই হন না কেন আমি তাদের মুখোশ উন্মোচন করছি এবং করবো ইনশাআল্লাহ।